চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার
চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার – ছেলে হোক কিংবা মেয়ে আমরা সবাই চাই সুস্থ, সুন্দর, ঘন, কালো মজবুত চুল। কিন্তু মুখ দিয়ে বললেই তো আর সম্ভব হয় না; এর জন্য প্রয়োজন চুলের যত্ন নেয়া এবং জানতে হবে চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার। চুলের স্বাস্থ্য দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার দেহের কি অবস্থা। ভালো ও স্বাস্থ্যকর চুল সুস্থ দেহের ইঙ্গিত দেয়। এখন আপনি বলতে পারেন কীভাবে? কারণ দেহে যদি সকল পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য থাকে তাহলেই আপনি মজবুত ও ভারী চুল পাবেন। সুতরাং চুল দেখেই বুঝা যায় কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা। এছাড়াও চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার তা জেনে রাখা ভালো। তাই আজকের পোস্টে শুধু চুলের জন্য দরকারি পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য চাই জল-তেলের সঠিক ব্যবহার এবং পাশাপাশি খেতে হবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন যুক্ত খাবার। যদি চুল শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে না পারে তাহলে মাথায় শুধুমাত্র তেল আর শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল সুন্দর রাখতে পারবেন না। চুল পড়া থামাতে এবং সুস্থ ও মজবুত তরতাজা চুলের জন্য আপনাকে উচ্চ ভিটামিন যুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।আর আপনি চুলের জন্য এই দরকারি সব পুষ্টি উপাদানগুলো কীভাবে সবচেয়ে ভালো উপায়ে পেতে পারেন তাই জানাবো এই পোস্টটির মাধ্যমে।
চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার
চুলের ভিটামিনের জন্য কি কি খাবার খাবেন
চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার তা জানার আগে জানতে হবে; ভিটামিন খেলে নাকি ব্যবহারে ভালো ফলাফল আসে ? উত্তর অবশ্যই খেলে। এখন জানতে হবে কোন কোন খাবারে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বেশি থাকে। চুল পড়া থামাতে এবং সুস্থ ও মজবুত তরতাজা চুলের জন্য আপনি খাদ্যতালিকায় সহজলভ্য এই খাবারগুলো রাখতে পারেন-
ডিমঃ চুলের পরিচর্যার জন্য অনেকেই চুলে ডিম মাখিয়ে থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেন, ডিম চুলে না লাগিয়ে খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। ডিমে আছে ভিটামিন বি এবং বায়োটিন যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধির সাথে চুল পড়ার সমস্যাও কমায়। চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমিয়ে চুল ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। চুলের যত্নে ডিম খুব উপকারি।
বাদামঃ চুল ভালো রাখতে আমরা নানান ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বাদাম চমৎকার কাজ করে, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। এক এক ধরনের বাদামে পাওয়া যাওয়া এক এক ধরনের পুষ্টি উপাদান এবং এর তেল ত্বক, চুল, মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের জন্য খুব উপকারি। সাধারণ চীনাবাদাম থেকে শুরু করে, কাজুবাদাম, আখরোট ও কাঠ বাদাম সহ সব বাদামেই রয়েছে চুলের জন্য উপকারি উপাদান। চুলের যত্নে বাদাম হতে পারে জাদুকারি খাদ্য। প্রতিদিন হালকা খাবার হিসেবেও বাদাম খেতে পারেন।
পালংশাকঃ ভিটামিন ও নানা খনিজ যার মধ্যে আয়রন এবং ফোলাইট উপাদানে সমৃদ্ধ পালংশাক।পালং শাকে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড । পালংশাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পৌঁছায়। যার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কেবলমাত্র পালংশাকই নয়, বরং সকল সবুজ শাকই চুলের জন্য উপকারি।
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি, যা চুলকে শক্ত ও মজবুত করে তোলে। সামুদ্রিক প্রায় সব মাছেই যেমন স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, ট্রাউট, টুনা মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩। যা চুলের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দূর করে থাকে, চুল পড়া আটকায়। এছাড়া চুলের রুক্ষ এবং শুষ্ক ভাব দূর করে, নতুন করে চুল গজাতে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার
ডেইরি প্রোডাক্টঃ দুধের মধ্যে রয়েছে চুলের জন্য অতি প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান ক্যালসিয়াম এবং বায়োটিন। এই দুই উপকরণই চুলের বৃদ্ধিতে সব চেয়ে বেশি সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন দুগ্ধজাত প্রোডাক্ট বা দুধ খেতে পারেন। শুধু চুলের বৃদ্ধিই নয়, চুলের গঠন সুদৃঢ় করতেও সাহায্য করে এই ডেইরি প্রোডাক্ট।
মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ এর যোগান দেয় ও মাথার স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় তেল তৈরি করে। ভিটামিন-এ এর অভাবে মাথার ত্বকে তেল তৈরি কম হয়, যার ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও খুশকির মতো সমস্যা দেখা দেয়। মিষ্টি কুমড়া, আম, গাজর, বাঙ্গি ও অ্যাপ্রিকট ভিটামিন-এ এর জন্য চমত্কার খাবার।
মটরশুঁটিঃ চুলের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হল কেরাটিন। এই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবর হচ্ছে মটরশুঁটি ও ডাল । শক্ত ও মজবুত চুলের জন্য নিয়মিত খেতে পারেন মটরশুঁটি ও ডাল। শরীরে যথাযথ ভাবে এই ভিটামিন থাকলে চুলের বৃদ্ধি হবে, আর তেমনি চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে।
ফলঃ পেয়ারা, পেঁপে, কমলা এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি। ভিটামিন-সি চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন করে। যা চুলের ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। আবার নাশপাতি চুল সুন্দর রাখা, শরীরে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি ও রক্তে পিএইচ এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই চুলের যত্নে এই ফল খেতে পারেন।
চুলের যত্নে কার্যকরি একটি ফল আমলকি। বেশির ভাগ মানুষ চুলের যত্নে আমলকির তেল ও গুঁড়ো ব্যবহার করে থাকে। তবে চার থেকে পাঁচটি আমলকি চিবিয়ে খেলেও চুল পড়া অনেকাংশে রোধ হবে। আমলকি আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা নতুন চুল গজাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি চুল পড়া রোধ করে চুল ঘনও করে।
চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার
সবজিঃ
গাজর – চুলের যত্নে ও চুল পরা রোধ করতে গাজর খুবই উপকারি। গাজরেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা চুলের জন্য খুব উপকারি। নিয়ম করে প্রতিদিন গাজর খেলে চুল পড়া সমস্যার লাগাম টানা যায়।
টমেটো – চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন টমেটোতে পাওয়া যায়। টমেটোতে থাকা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখতে পারেন।
শসা – শসা একটি ভিটামিন-এ জাতীয় সবজি। শসাতে থাকা সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন-এ চুলের জন্য অনেক উপকারি। এই উপাদানগুলো চুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে চুল পড়া বন্ধ করে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি কচি শসা খেলে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যাবে এবং নতুন চুল গজাবে।
ক্যাপসিকাম – চুলের জন্য আরেকটি ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি হলো ক্যাপসিকাম। লাল, হলুদ এবং সবুজ ক্যাপসিকামে রয়েছে ভিটামিন-সি। ভিটামিন সি চুল বৃদ্ধি করে এবং চুলের ভঙ্গুরতা দূর করে। চুলের সুস্থতায় সালাদ হিসেবে অথবা রান্নায় ক্যাপসিকামের ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের জন্য কোন কোন ভিটামিন দরকার তা জানতে ক্লিক করুন।