স্বাস্থ্য

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আমাদের সবারি বেশ পরিচিত একটি ফল হচ্ছে খেজুর। খেজুর বেশ সুস্বাদু ও সুমিষ্ট একটি ফল। প্রতিদিন খেজুর খেলে শরীর ভালো থাকে এবং সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধে তো খেজুরের তুলনা হয় না। প্রতিদিন খেজুর খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তেমনি চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে থাকে। আর ইসলামে বর্ণিত আছে যে, খেজুর খাওয়া হচ্ছে সুন্নত। আর এই সুন্নতি খাবারটিতে আছে অনেক উপকারিতা।

খেজুর খাওয়ার

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

পুষ্টিগুণে স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি ফল হলো খেজুর, যা খাদ্য পরিপাক করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগও প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খেজুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে থাকে। খেজুরের যেই মিষ্টতা তা চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে। হাড়ের সুরক্ষায় খেজুর ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করে হাড় গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে রয়েছে ৯০ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম রয়েছে ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রামের মত ফাইবার এবং আরও রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। খেজুর এমন একটি ফল যা শক্তির অন্যতম একটি ভালো উৎস।

আমাদের দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি খেজুর খেয়ে থাকে রমজান মাসের ইফতারিতে। কিন্তু আমরা হয়তো বেশির ভাগ মানুষই জানি না যে কেন ইফতারে খেজুর খাওয়াকে এতো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে রয়েছে  প্রচুর এমিনো অ্যাসিড, যা প্রচুর শক্তি, শর্করা, ভিটামিন এবং মিনারেল। আর এই উপাদানগুলোর কারণে সারাদিন রোজা রাখার পর ক্লান্তি দূর করতে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের জোগান দেয় খেজুর। তাই রোজার সময় ইফতারিতে খেজুর খাওয়াকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরকম উপকারিতা সবসময়ই পেতে সারাবছরই খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ঘড়তে পারেন।

খেজুর খাওয়ার সময় ও নিয়ম

দিনভর শরীরে এনার্জি পাওয়ার জন্য সকালে খেজুর খেতে পারেন। সকালের ব্যায়াম শুরুর ৩০ মিনিট আগে কয়েকটি খেজুর খেয়ে নিতে পারেন। এতে আপনি দ্রুত হাঁপিয়ে যাবেন না, তেমনি দূর হবে পেটে থাকা দূষিত পদার্থও। আবার সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পরদিন সকালে খেতে পারেন।

আবার স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে দিনের বিভিন্ন সময়ে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খেতে পারেন। অনেকেই তো আবার রাতে কুসুম গরম দুধে খেজুরের টুকরো মিশিয়ে খেয়ে থাকেন  খেতে পারেন। ইহা একটি কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে থাকলে ভারি খাবার খাওয়ার পর খেজুর খাবেন না। এছাড়া ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানার মত অসুখ থাকলেও এড়িয়ে চলুন এই ফল।

খেজুর খাওয়ার যত

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত

খেজুরে রয়েছে নানান উপকারিতা তাই বলে সকাল বিকাল খেজুর খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনের বেশি যেকোনো খাবার খাওয়াই বিপদের কারণ হতে পারে। আপনি প্রতিদিন ৪-৫টি খেজুর খেতে পারে, তবে এর বেশি নয়। ৪-৫টি বা ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি।

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়

খেতে সুস্বাদু একটি ফল খেজুর, এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এতে বিদ্যমান আয়রন, ফাইবার, প্রোটিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম সহ আরও নানা উপাদান। শরীরে চমৎকার পরিবর্তনের জন্য প্রতিদিন কয়েকটা খেজুর খেতে পারলে ভালো। আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অন্তত দুটি খেজুর যদি খেতে পারেন তবে অনেক রোগ আপনার থেকে দূরে থাকবে। কারণ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না।

এক নজরে দেখে নিন খেজুরের যত পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা-

১. ফ্যাট বা চর্বি: খেজুরে কোলেস্টেরল এবং বাড়তি চর্বি নেই।

২. ক্যানসার প্রতিরোধ: খেজুরে অনেক পুষ্টি এবং প্রাকৃতিক আঁশ থাকায়, যারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে থাকেন তাদের ক্যানসার হাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

৩. ভিটামিন: খেজুরে রয়েছে বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ ভিটামিন; যা আমাদের দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে খেজুর দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর খুবই কার্যকর ভুমিকা রাখে।

৪. আয়রন: খেজুরে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  তাই দুর্বল হৃৎপিণ্ডের মানুষের জন্য খেজুর হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ খাবার।

৫. প্রোটিন: খেজুর হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ ফল। প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

৬. ক্যালসিয়াম: খেজুরে থাকা প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা হাড় গঠনে সহায়ক ভুমিকা রাখে। এছাড়া যা হাড়কে মজবুতও করে। আবার খেজুর শিশুদের মাড়িকে শক্ত করে।

৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর: খেজুরে থাকা সব পুষ্টি উপাদান যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। ক্ষেত্র বিশেষ কখনো কখনো ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক কার্যকর।

৮. কর্মশক্তি বাড়ায়: খেজুরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকার কারণে খুব দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে থাকে। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে রোজাদাররা  ২-৪টি খেজুর খেয়েই খুব দ্রুত তাদের ক্লান্তি দূর করতে পারেন ।

৯. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ: খেজুরে থাকা প্রচুর মিনারেল ও আয়রন  রক্তশূন্যতা রোধ করে থাকে। তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম এমন ব্যক্তিরা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।

১০. ওজন হ্রাস: অল্প কয়েকটি খেজুর খাওয়ার মাধমে পেটের খুধা দূর করা এবং পাকস্থলীতে কম খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত করে। এই কয়েকটা খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করা দেয়। আর এভাবেই অল্প খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীরের ওজন হ্রাস করতে পারেন।

এবার জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার অপকারিতা-

১. পেটের সমস্যাঃ অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নিয়ম করে ড্রাই ফুডস খেয়ে থাকেন। ড্রাই ফুডস হিসেবে খেজুর অনেকের কাছেই পছন্দের খাবার। আমরা ড্রাই ফুডস হিসাবে যে খেজুর খাই তাতে থাকা বিদ্যমান সালফাইট পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে। আবার পুষ্টিবিদ্দের মতে অতিরিক্ত খেজুর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া পেট ফাঁপা এবংডায়রিয়ার মত রোগ হতে পারে। খেজুরে বিদ্যমান ফাইবার যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে।

২. শ্বাসকষ্টের সমস্যাঃ যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় অতিরিক্ত খেজুর খেলে। তাই শ্বাসকষ্টের রোগীদের খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে আবার এলার্জির সমস্যা যাদের আছে তারাও খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন কারণ খেজুর এলার্জির সমস্যা বৃদ্ধি করে।

৩. ওজন বৃদ্ধিঃ অনেকেই ডায়েট করতে গিয়ে খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখেন কিন্তু খেজুরে রয়েছে প্রচুর ক্যালোরি। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত খেজুর খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে।

৪. ত্বকের সমস্যাঃ দীর্ঘদিন খেজুর সংরক্ষণ করতে সালফাইট নামক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে সালফাইটের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যার প্রভাবে ত্বকের রেশ, চুলকানি, লাল হয়ে যেতে দেখা যায়।

৫. ডায়াবেটিস বৃদ্ধিঃ অতিরিক্ত খেজুর খেলে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পায় কারণ আমরা জানি খেজুর একটি মিষ্ঠফল এতে সুগারের পরিমাণ অনেক থাকে যার ফলে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয় এই খেজুর। তাই অতিরিক্ত খেজুর খেলে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পায়।

খেজুর খাওয়ার যত

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

শুকনো খেজুর খেলে কি হয়

শুকনো খেজুরে ফাইবারের পরিমাণ প্রচুর থাকে এবং এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হচ্ছে, প্রতিটি শুকনো খেজুরে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রক্ত স্বল্পতার রোগীরা প্রতিদিন শুকনো খেজুর খেতে পারেন।  একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে থাকে শুকনো খেজুর। শুকনো খেজুর  গুড়ো করে  খাওয়ার প্রচলন আসে।  ছোট বাচ্চারা যারা খেজুর খেতে পারেনা, তাদেরকে শুকনো খেজুর  গুড়ো করে  দুধের সাথে মিশিয়ে তার সাথে এক চামচ মধু দিয়ে খাওয়ানো হলে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে।

শেষ কথা

সমগ্রভাবে খেজুর একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার, যা বিভিন্ন উপকারিতা দিয়ে থাকে। এটি পুষ্টিশক্তি প্রদান করে এবং পুষ্টি বৃদ্ধি করে। খেজুরে অনেক প্রকারের আন্টিঅক্সিডেন্টস পাওয়া যায়, যা মুক্ত রেডিক্যাল কে নির্মূল করে দেয়। এছাড়া, খেজুর মিঠা স্বাদের সাথে প্রোটিন, আইরন, পটাসিয়াম, ফাইবার, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন মিনারেল সরবরাহ করে। এই উপকারিতা সমৃদ্ধ খাবারটি আপনার শরীরের স্বাস্থ্য ও ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া, খেজুর খেলে আপনার ত্বকের গুণগত মান বাড়াতে এবং ডায়াবিটিসে সাহায্য করতে পারে। তাই, স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদেশ্য এই ফলটি আপনার খাবারে যোগ করা একটি ভাল ধারণা হতে পারে।

খেজুর খাওয়ার আরো উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

চুলের জন্য কোন ভিটামিন দরকার তা জানতে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *